শ্রমের মর্যাদা রচনা(১২০০+ শব্দের)- বাংলা রচনা class 7,8,9,10

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই শ্রমের মর্যাদা রচনাটি পড়তে আজকের পোস্টটিতে এসেছেন। আমরা আজকের পোস্টটিতে তোমাদের জন্য শ্রমের মর্যাদা রচনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাই শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমরা যদি শ্রমের মর্যাদা রচনাটি ভালোভাবে পড়তে চাও তাহলে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন।
তাই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দরা আপনারা যদি শ্রমের মর্যাদা রচনাটি পড়তে চান তাহলে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। তাহলে আপনি শ্রমের মর্যাদা রচনাটি পড়তে পারবেন।
পোস্টসুচনাঃ

শ্রমের মর্যাদা রচনা

ভূমিকা | শ্রমের মর্যাদা রচনা

a hard working street-cleaner is a better man than a lazy scholar' আইনস্টাইন"

মানবসভ্যতার সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে শ্রম। আজকের সভ্যতা যুগ-যুগান্তরের অগণিত মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল। জীবনধারণের তাগিদেই মানুষ কর্মব্যস্ত। গুহাবাসী মানুষ একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই বর্তমানের এ উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। কৃষকের ফসল উৎপাদন শিল্পীর শিল্পকর্ম, জানীর জানার্জন, বিজ্ঞানীর নব নব আবিষ্কার সবই শ্রমলব্ধ ফসল। মানবজীবনের সবক্ষেত্রেই যা কিছু দৃশ্যমান তা সবই পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। তাই শ্রমের মর্যাদা অনস্বীকার্য। 

শ্রমের সংজ্ঞা 

শ্রম বলতে কাজ শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমকে বুঝায়। ইংরেজিতে বলা হয় Labour, Toil, Effort, Application ইত্যাদি। বস্তুত, এই জগৎ হচ্ছে মানুষের জন্য এক কর্মযজ্ঞ। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ তার ভাগ্য নির্ধারণ করে। ভালোকর্মের জন্য মানুষ সুফল লাভ করে। কুকর্মের জন্য দুর্ভাগ্য বরণ করে। একারণেই বলা হয়-'পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি।'

শুদের শ্রেণিবিভাগ 

শ্রম দুই প্রকার। যথা- শারীরিক শ্রম ও মানসিক শ্রম। কৃষক, শ্রমিক মজুর প্রভৃতি শারীরিক শ্রমের মানুষ। অপরদিকে পেশাদার চাকুরিজীবী ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মানুষ মানসিক শ্রম দিয়ে থাকেন। দেশের উন্নয়নের জন্য উভয় শ্রমের প্রয়োজন। সব সভ্যতার মূলেই রয়েছে শারীরিক ও মানসিক শ্রমের সম্মিলন।

মানসিক শ্রম 

মানসিক উন্নতি করার জন্য মানসিক শ্রমের প্রয়োজন হয়। কথায় বলে- 'অলস মণ্ডিষ্ক শয়তানের কারখানা। শ্রমবিমুখ ব্যক্তির মনে কখনো সুচিন্তা ও বস্তুব উদয় হয় না। পক্ষান্তরে পরিশ্রমী ব্যক্তির মন ও মস্তিষ্ক সবসময় কু চিন্তা থেকে দূরে থাকে। বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক চিকিৎসক রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ ও শিল্পীর পরিশ্রম মূলত মানসিক। তবে তাঁদের এই মানসিক শ্রমকে বাস্তবে রূপায়িত করতে ঘিয়ে কায়িক শ্রম ও করে থাকেন।

শারীরিক শ্রম বা কায়িক শ্রম 

জগতের সকল জীবকেই বেঁচে থাকার জন্যে কম- বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয়। মানসিক শ্রম একটা কাজের প্রেরণা যোগায় আর শারীরিক শ্রম তা সমাধা করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে শারীরিক শ্রমের নিমিত্ত হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। শারীরিক শ্রম অত্তাসম্মানের পরিপন্থী নয় বরং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান উপায়। চাষি, শ্রমিক, কুলি, মজুর এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়েই শারীরিক শ্রমে অবতীর্ণ হয়। তাই করি নজরুল ইসলাম তাদের বন্দনা করেছেন-

'গাহি তাহাদের গান....
শ্রম- কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি- তলে
এপ্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে। [জীবন বন্দনা।

শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা 

মানব জীবনের জন্য শ্রমের আবশ্যকতা অপরিহার্য। বিশেষ করে মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, অপর দিকে নিজের ভাগ্য নির্মাণের স্থপতি। এজন্য বলা হয় Man is the architect of his own fate. মানুষের ভাগ্য মানুষকে নিজের হাতে গড়তে হয় অন্যের ওপর নির্ভর করে নয়। শ্রম ভাগ্য নির্মাণের হাতিয়ার। প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসে সুপ্ত প্রতিভা নিয়ে আর এ সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হয় শ্রমের মাধ্যমে। পৃথিবীর বরণীয় ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণ করলে বোঝা যায় এরা ব্যক্তি জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে কতখানি পরিশ্রম করেছিলেন। 

তাছাড়া শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো এমন করে স্রষ্টা তৈরি করছেন যে, পরিশ্রম না করলেই চলবে না। পরিশ্রমবিমুখ শরীরের যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে যায়, স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তাই দৈহিক কিংবা মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই শ্রমের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পরিশ্রম করে সারা জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও ততটা সমুন্নত। শ্রমজীবী মানুষেরা পরিশ্রমকে সম্মানের চোখে দেখেন। অন্যদিকে অলস লোকেরা সমাজে ঘৃণার পাত্র। 

পরিশ্রমী লোক কখনো কোনো কিছুর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে না। যার কারণে পরিশ্রমী মানুষেরা সমাজে সম্মানজনক আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। পৃথিবীতে যত মানুষ গৌরব অর্জন করেছে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাই জনৈক মনীষী বলেছেন, "ক্ষণস্থায়ী জীবনটাকে পরিশ্রম দ্বারা যত বেশি পারা যায় কাজে লাগাইয়া লও।" নিরলস কর্ম প্রচেষ্টাই সমাজের উচ্চস্তরে পৌঁছানোর সহজ সিঁড়ি।

সকল ধর্মে শ্রমের মর্যাদা 

সকল ধর্মেই শ্রমের মর্যাদাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে শ্রমিকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে ও শ্রমিকদের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্ম প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তিনি বলেছেন- "নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিত্র জিনিস আর কিছু নেই।

তাছাড়াও হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় শ্রমের কথা বলা হয়েছে , যেখানে সৎ ভাবে কাজ করে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করার কথা বলা হয়েছে। খ্রিষ্টধর্মে শ্রমহীন বেকার মানুষের মর্যাদা নেই। অন্যান্য ধর্মেও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের অবস্থার পরিবর্তন অর্থাৎ উন্নতি করার কথা বলা হয়েছে। শ্রমের প্রকারভেদ বড় কথা নয়। যে কোনো শ্রমেরই গুরুত্ব ও মর্যাদা সমান।

শ্রমবিমুখতা 

শ্রমবিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারুণ অভিশাপ। শ্রমহীন জীবনে ব্যর্থতা এসে ব্যক্তি শ্রমকে অবজ্ঞা করে, তার শ্রম সম্বন্ধে কোনো অভিজ্ঞতা নেই তার জীবনের কোনো মূল্য নেই। বিখ্যাত মনীষী কার্লাইন বলেছেন, 'আমি মাত্র দুই প্রকৃতির লোককে সম্মান করি, সম্মানের যোগ্য তৃতীয় নেই। প্রথমত, আমার সম্মানের পাত্র ঐ কৃষক এবং শ্রম-শিল্পী, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে অন্ন-বন্ত্রের সংস্থান করেন, মানুষ হয়ে মানুষের মতো জীবনযাপন করেন। 

আপনার সম্মানের পাত্র তিনি, যিনি আত্মোন্নতি সাধনে নিরত আছেন, যিনি শরীরে নয় আত্মার খাদ্য সংস্থানে, জ্ঞানধর্ম অনুশীলনে ব্যাপৃত আছেন- এ দু'ব্যক্তি আমার ভক্তিভাজন। সুতরাং একমাত্র নির্বোধেরাই শ্রমকে অবজ্ঞা করে। 

প্রতিষ্ঠা খ্যাতি প্রতিপত্তি যশ-সুনাম, মর্যাদা এসব ত্রিবেণী ত্রিধারার দুর্বর শ্রোতমুখে টিকে থাকার জন্যে প্রয়োজন শ্রম ও কঠোর সাধনা। নিরন্তর ও নিরলস শ্রমে জীবনাকাশ থেকে দারিদ্র্যের ঘরঘটা দূর হয়ে সফলতার নবীন সূর্যালোক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

উপসংহার 

মানুষ মরণশীল প্রাণী কিন্তু কর্মের মাধ্যমেই সে অমর হতে পারে। আজকের মানুষের কর্মই আগামী দিনের মানুষকে নতুন কর্মে উজ্জীবিত করে, নতুন কল্যাণ নতুন অগ্রগতি সাধনে ব্রতী করে। তাই মানুষ কেবল জীবন যাপনেই বাঁচে না, শ্রমের শক্তিতেই বাঁচে। আর শ্রমই মানুষকে করে তোলে অমর। তাই প্রখ্যাত লেখক মাক্সিম গোকে বলেছেন-

'শ্রম ও সৃজনের বীরত্বের চেয়ে গরীয়ান আর কিছু দুনিয়ায় নেই।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে মনের সকল সংকীর্ণতা ত্যাগ করতে হবে এবং যেকোনো শ্রমকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। সম্মিলিত শ্রমই একটি জাতির কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লিংক বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url