বাংলাদেশের প্রধান নদীর নাম ও নদীর বর্ণনা সমূহ জেনে নিন
আপনারা কি বাংলার নদ নদী সম্পর্কে জানেন। যদি না জেনে থাকেন তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমরা আজকে বাংলাদেশের প্রধান নদীর নাম ও নদীর বর্ণনা সমূহ সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা যদি বাংলার নদীর নাম এবং তার বর্ণনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আজকের আর্টিকেলটিতে আপনারা বাংলাদেশের প্রধান নদীর নাম ও নদীর বর্ণনা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ভূমিকাঃ
নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিরাট সমভূমির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো বয়ে এনেছে পলিমাটি। ফলে এদেশের মাটি উর্বর হয়ে উঠেছে। উর্বর মাটিতে পর্যাপ্ত ফসল ফলে আমাদের দেশ হয়েছে শস্য-শ্যামলা। নদীই বাংলাকে গড়েছে বাঙালির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাই আমাদের বাংলাদেশের জন্য নদ নদী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদীর নাম জানতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
বাংলাদেশের প্রধান নদীর নাম
আমরা এখন বাংলাদেশের নদীর নাম সম্পর্কে জানতে পারবো।নদীমাতৃক বাংলাদেশের বুক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অসংখ্য নদ-নদী ও খাল-বিল। বাংলাদেশের বড় বড় নদীর মূল উৎস দেশের বাইরে। নিচু অঞ্চল বলে বাংলাদেশের বুক চিরে নদীগুলো বয়ে চলে ক্রমে সাগরে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশের অসংখ্য নদ- নদীর মধ্যে কতকগুলো মূল নদ রয়েছে। মূল 'নদীগুলো হলো- পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, তিস্তা ও করতোয়া। এই মূল নদীসমূহের শাখা নদী ও উপনদী বয়ে গেছে চারদিকে। এ নদ-নদীগুলিই বাংলার, প্রাণ, বাংলার আকৃতি-প্রকৃতি নির্ণয় করেছে যুগে যুগে । বাংলা প্রধান নদীর নাম নিচে দেয়া হল।
- পদ্মা
- বক্ষপুত্র
- যমুনা
- মেঘনা
- করতোয়া
- কর্ণফুলী
- তিস্তা
বাংলার নদ নদীর বর্ণনা সমূহ
চলুন আমরা এবার জেনে নেই বাংলাদেশের নদীর বর্ণনা সমূহ সম্পর্কে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।
পদ্মাঃ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী পদ্মা। গঙ্গা নদী হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। । এরপর প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিম ও পরে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধূলিয়ান নামক স্থানকে ভাগীরথী (হুগলী নদী) নামে এর একটি শাখা বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, কুমার, গড়াই ও আড়িয়াল বা প্রভৃতি এর শাখা নদী ।
ব্রহ্মপুত্র ব্রহ্মপুত্র তিব্বতের মালভূমিতে অবস্থিত মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমাইয়াড়ুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বতের সেংগু নামধারণ করে আসামের মধ্য দিয়ে বৃহত্তম রংপুরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর আন্তর্জাতিক দৈর্ঘ্য ১৮০০ মাইল। এটি যমুনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জে পৃথক হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারের নিকট মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। কয়েকবার গতি পরিবর্তন করে চাঁদপুরে মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে সমুদ্রে পড়েছে।
যমুনাঃ যমুনা বাংলাদেশের বড় নদীগুলোর একটি। ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা হিসেবে এ নদীটি যমুনা নাম ধারণ করে প্রবাহিত হয়ে পদ্মা নদীতে মিশেছে। করতোয়া ও আত্রাই যমুনার প্রধান উপনদী। ধলেশ্বরী এর প্রধান শাখা নদী ।
মেঘনাঃ মেঘনা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। মেঘনা নদীর উৎপত্তি খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়ে। এর একটি শাখা সুরমা নদী নামে প্রবাহিত হয়েছে। অপর শাখা মেঘনা নাম নিয়েই ভৈরব বাজারের নিকট ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিশেছে। এরপর গতি হয়েছে দক্ষিণমুখী। অবশেষে মিশে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিশাল বুকে। সোমেশ্বরী, কংস প্রভৃতি এর প্রধান উপনদী।
করতোয়াঃ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আরেকটি নদী হলো করতোয়া। এ নদীটি এখন শুকিয়ে ছোট হয়ে গেছে। প্রাচীনকালে এটি বেশ বড় নদী ছিল। ভুটানের কাছে হিমালয় পাহাড়ে এর জন্ম, প্রথম দিকে তিস্তা নাম নিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে এর তিনটি ধারা তিন দিকে চলে যায়। পূর্বদিক থেকে দক্ষিণে বয়ে যাওয়া স্রোতটির নাম করতোয়া যা আত্রাই নদী।
কর্ণফুলীঃ কর্ণফুলী ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়েছে। মায়ানমারে তুইচাং এবং তুইলিয়ান পুই নামের দুটি স্রোতধারা ভারতের ডেমাগিরি নামক স্থানে মিলিত হওয়ার পর সম্মিলিত স্রোতধারা কর্ণফুলী নাম ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পতেঙ্গার কাছে এসে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।চেঙ্গি,মাইনী, রাখিয়াং. হালদা, কাসালং প্রভৃতি এর প্রধান উপনদী।
তিন্তাঃ তিস্তা খুব বড় নদী নয়। তবে এর গতিপথ বাংলাদেশের অনেক ভৌগোলিক পরিবর্তন সাধন করেছে। প্রাচীন ত্রি-স্রোতা থেকে ‘তিস্তা' নামটির উৎপত্তি। ১৭৮৬ সালের বন্যার সময় তিস্তা পদ্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, শত শত নদীর নেটওয়ার্কে বাধা বাংলাদেশ । উপরোল্লিখিত বড় নদীগুলো ছাড়াও এদেশে রয়েছে কপোতাক্ষ, রূপসা, গড়াই, আড়িয়াল খাঁ, ধলেশ্বরী, শিবসা, কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা ইত্যাদির মতো অসংখ্য নদ-নদী। এত সংকীর্ণ পরিসরে এত অধিকসংখ্যক নদ-নদী পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ছোট-বড় অসংখ্যা নদ-নদী বাংলার ইতিহাস রচনা করেছে। আশা করছি আপনারা বাংলার নদী সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং তাদের বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।