ডাবের শাসের উপকারিতা ও ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

গরমকালে তৃষ্ণা মেটাতে আমরা বিভিন্ন রকম পানীয় পান করে থাকি। কিন্তু এগুলো শরীরের জন্য কতখানি উপকারী বা উপকারি তা আমাদের অনেকের ধারণা নেই। তবে এসব দিক দিয়ে ডাবের পানি অনেক উপকারী। ডাবের পানি খাওয়া কিছু নিয়ম রয়েছে।
ডাবের শাসের উপকারিতা
ডাবের পানি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আর এই ডাবের সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়ে আমরা আজকের এই পোস্টটিতে সম্পূর্ণ আলোচনা করব।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ 

ভূমিকা

কচি নারিকেলগুলোকে আমরা ডাব বলে থাকি। কচি ডাবের ভেতরকার রসকে ডাবের পানি বলা হয়ে থাকে। ডাব যখন পেকে যায় তখন নারিকেল হয় তার সাথে ডাবের পানি ও কমতে থাকে এবং ভেতরে নারিকেলের শাঁস জমা হতে থাকে। ডাব আমাদের ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। এছাড়া আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী। এই ডাব আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। 

ডাবের পানির উপকারিতা

ডাব আমাদের অনেকেরই প্রিয় পানীয়। আর এই ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার সাধারণত আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী। এছাড়া ডাবের পানি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে ডাই-ইউরেটিক উপাদান যা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে ফেলে। চলুন জেনে নিই ডাবের পানির উপকারিতা।

  • ডাবের পানিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা আমাদের ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ডাবের পানি ভূমিকা অপরিসীম।
  • ডাবের পানিতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরে হাড়কে মজবুত রাখার জন্য আমরা ডাবের পানি পান করতে পারি।
  • এছাড়া ডাবের পানি আমাদের ত্বকের oily ভাবকে দূর করতে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ত্বকে সমস্যায় ও ইনফেকশন হলে ডাবের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ।
  • অতিরিক্ত তাপের ফলে গরমকালে শরীর ঘামের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পানি হারায়। গরমে বমি হলে মাঝে মাঝে শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। ফলে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন মতো সমস্যা দেখা দেয়। ডাবগুলিতে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা আপনাকে আরও শক্তি দেয়। আর পানি শরীরের শূন্যস্থান পূরণ করে।
  • গরমের সময় আমাদের শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে না। শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য আমার ডাবের পানি পান করতে পারি। ডাবের পানি সাধারণত শরীরে বিষাক্ত পদার্থ বের কর দেয়।
  • ডাবের পানি আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হাত থেকে রেহাই দেয়। এছাড়াও প্রতিদিন ডাবের পানি পান করলে এসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যা।
  • ডাবের পানি আমাদের ত্বকের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ যা আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে।
  • আমরা অনেক সময় চোখের নিচে কালো দাগ দেখতে পায়। ডাবের পানি নিয়মিত খেলে এই কালো দাগ দূর করা যায়। তাছাড়াও ত্বকের কালচে ভাব দূর করা এবং চোখের ফোলা ভাব কমিয়ে থাকে।
  • ডাবের পানিতে এনজাইম থাকায় আমাদের হজমে সাহায্য করে থাকে। তাই নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
  • এছাড়াও আমাদের শরীরে পানির অভাব পূরণ করে থাকে। শরীরে এনজাইমের ঘাটতি পূরণ করে এবং ভারসাম্য রক্ষা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ডাবের পানি অধিক কার্যকরী। ডাবে থাকা আশ দেহের বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে থাকে।

ডাবের শাসের উপকারিতা

ডাবের পানির সাথে রয়েছে শাঁস। যার আবার অনেক উপকারিতা রয়েছে। ডাবের শাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে। মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এছাড়াও শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে, হাটকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অনেকে মনে করে থাকেন যে ডাবের শাস খেলে ক্যালরি বাড়ে এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় এটা সত্য নয়। বরং ডাবের শাস খেলে পেটের মেদ কমে সাথে ওজনও কমতে থাকে। ডাবের শ্বাস আমাদের ক্ষুধা কমিয়ে রাখে। ফলে আমরা খাবার কম খাই আর ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই আমরা ওজন কমাতে ডাবের শাস খেতে পারি।
আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরার উপকারিতা

মুখে ডাবের পানির উপকারিতা

মুখের উজ্জ্বলতা ও চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ডাবের পানিতে কি ভিটামিন আছে। ডাবের পানিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি এবং ফাইবার তন্তু। এ পানি দিয়ে মুখ ধুলে মুখের দাগ সহজেই দূর করা যায় এবং মুখের স্বাভাবিক উজ্জলতা বজায় রাখে। তাছাড়াও মুখে ব্রণ থাকলে সেটা দূর করা সম্ভব। যাদের মুখে তৈলাক্ত ভাব রয়েছে ডাবের পানি দিয়ে ধুলে তা নির্মূল করা যায়।

এছাড়া ত্বকের উজ্জলতায় ডাবের পানি অধিক কার্যকর। ত্বকের অয়েলি ভাব দূর করতে ডাবের জল ব্যবহার করে যেতে পারে। বিশেষ করে গরমকালে যাদের ত্বকে অয়েলি ভাব রয়েছে তারা এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। শরীর আদ্রতা ও বজায় রাখে। ত্বকের পানির ভারসাম্য এবং আদ্রতা বজায় রাখে।শুষ্ক ত্বককে হাইড্রেট এবং পুষ্টি জোগাতে শর্করা এবং অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন। যা ডাবের পানিতে রয়েছে। এছাড়া অনেকে ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায় জানতে চেয়েছেন। ডাবের পানি সাধারণত ফ্রিজে দুই থেকে তিন দিন রাখলে ভালো থাকে।

ডাবের পানির অপকারিতা

সব জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। তেমনি ডাবের ও ভালো-মন্দ রয়েছে। সবকিছু খাওয়ার নিয়ম কানুন রয়েছে। তেমনি ডাবের পানি নিয়ম করে খেতে হবে। অর্থাৎ এখন আমরা ডাবের পানির অপকারিতা সম্পর্কে জানব।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ডাবের পানি খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। তাই নিয়ম অনুযায়ী ডাবের পানি খেতে হবে। অনিয়মভাবে খেলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে।
  • এছাড়া যাদের এলার্জি রোগ রয়েছে তাদের ভেবেচিন্তে ডাবের পানি খেতে হবে হবে। খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। না হলে এলার্জি রোগীদের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
  • যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ঠান্ডা রোগ বেশি হয় তাদের ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় ডাবের পানি খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • এছাড়া যাদের হাটের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

অনেকেই গুগল এ সার্চ করে থাকেন সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয়। আজ আমরা এই বিষয় সম্পর্কে জানব। সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। যা আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে। ডাবে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ফলে ডাবের জল নিয়মিত খেলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

তাই ডাবের পানি প্রতিদিন নিয়মিত পান করবেন। অতিরিক্ত পান করা যাবে না। গরমে ক্লান্তি অনুভব করলে ডাবের জল পান করলে এক নিমিষেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এভাবে আমরা ডাবের পানি খেতে পারি। ডাবের জল খেতে হলে অবশ্যই কচি ডাব খাবেন। কচি ডাবের জল অত্যন্ত সতেজ এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়।

মন্তব্য

প্রাকৃতিক উপায়ে কোন কিছু উপকার পেতে হলে সাথে সাথে তা পাওয়া যায় না। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘক্ষণ সময় এবং ব্যবহার। আপনি যদি ডাবের পানি থেকে উপকার পেতে চান তাহলে অবশ্যই দীর্ঘদিন অর্থাৎ প্রতিদিন নিয়মিত ডাবের জল খেতে হবে। হঠাৎ একদিন খেলে হবে না অর্থাৎ কোন উপকারে আসবে না। তাই নিয়মিত পান করতে হবে। 

তবে খেয়াল রাখতে হবে বেশি ডাবের পানি পানির প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন নিয়মিত পান করলে অবশ্যই এ থেকে উপকার পাবেন।আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন এবং কোন কিছু ভুল হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url