মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায়
আধুনিক যুগে আমরা মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারি না। আমরা সকলেই সব সময়
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই মোবাইল ফোনেও কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে।
তার মধ্যে মোবাইলের স্ক্রিনের ব্লু লাইট অন্যতম। এটি আমাদের চোখে ক্ষতিকর আলো
দিয়ে চোখের ক্ষতি করে। আপনারা যদি মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ব্লু-লাইট থেকে
চোখকে নিরাপদ রাখার উপায় না জেনে থাকেন তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। বিস্তারিত
জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
আজকে আর্টিকেলটিতে আমরা মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ক্ষতিকারক ব্লু-লাইট থেকে চোখকে নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ক্ষতিকারক ব্লু-লাইট
- ভূমিকা
- বেশি মোবাইল দেখলে কি হয়
- অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো
- দিনে কত ঘন্টা মোবাইল চালানো উচিত
- মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায়
- আমাদের শেষ কথা
ভূমিকা
আমরা দৈনন্দিন জীবনে সবাই অধিক পরিমাণে মোবাইল ব্যবহার করে থাকি। তবে অতিরিক্ত
ব্যবহার এর ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। মোবাইলের স্কিনের ব্লু লাইট আমাদের চোখের
ক্ষতি করে থাকে। তাই আমাদের কাজ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কাজে মোবাইল ব্যবহার করা
উচিত নয়। তবে আমরা এই মোবাইল বা কম্পিউটারে স্কিনের ব্লু লাইট থেকে বাঁচার
জন্য কিছু পন্থা অবলম্বন করব। যা আমাদের চোখকে সুরক্ষা রাখবে। এই পৃথিবীতে সব
কিছুরই সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। ফলে আমাদের অসুবিধা থেকে বাঁচতে হবে।
তাহলে আমাদের চোখকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা আজকে জানতে পারবো মোবাইল বা পিসি
স্ক্রিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায় সমূহ। জানতে হলে অবশ্যই মনোযোগ
সরকারি পড়তে থাকুন।
বেশি মোবাইল দেখলে কি হয়
আজকাল আমরা সকলে মোবাইল ফোনে ব্যবহার করে থাকি অনেক। প্রায় 24 ঘন্টা বেশি সময়
ধরে সকলেই বিভিন্ন ইলেকট্রন ডিভাইস অর্থাৎ মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাবলেট ইত্যাদি
ব্যবহার করে থাকি। ফলে এগুলো থেকে নির্গত রশ্মি আমাদের চোখের মারাত্মক ক্ষতি
করে থাকে। এসব রশ্মিকে ব্লু লাইট বলা হয় থাকে। মোবাইলবা কম্পিউটারে স্ক্রিনে
একটানা তাকিয়ে থাকলে চোখের পেশিতে অনেক চাপ পড়ে এবং চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত
হতে পারে।
তাই সকলেই চোখকে সুরক্ষার জন্য কিছু উপায় ও অবলম্বন করতে হবে। আর মোবাইল ফোনের
অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অযথা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার
করা যাবে না। এই ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচতে আমরা জানবো মোবাইল বা পিসি
স্ক্রিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায় সমূহ সম্পর্কে। নিচে আমরা অতিরিক্ত
মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্পর্কে জানতে পারবো। তাই পরের অংশটি
আপনার জন্য হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে আমাদের চোখের সাথে সাথে দেহে অনেক কিছু ক্ষতি
হয় যা আমাদের জানা দরকার চলুন জেনে আসি কি কি ক্ষতি হয়।
- বিপজ্জনক বিকিরণ মনে রাখবেন যে আজ আমরা যে সকল মোবাইল ফোন ব্যবহার করি তা এক ধরনের বিপজ্জনক রশ্মি বিকিরণ নির্গত করে।
- অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আমাদের চোখের রেটিনায় চাপ পড়ে।
- এছাড়াও হাতে ও আঙ্গুল এ ব্যাথা হয়।
- রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
- দীর্ঘ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে বসে থাকাকালীন ঘাড়ে ব্যথা হয়।
- এছাড়াও আমাদের শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে।
- যারা ছাত্র তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়ে থাকে অর্থাৎ ছাত্রদের ক্ষেত্রে পড়াশোনায় মনুসংযোগ বসাতে সমস্যা হয় অর্থাৎ তারা মন সংযোগ করতে পারেনা। এছাড়াও বিভিন্ন কাজে মনঃসংযোগ করতে পারে । না
- অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে এক ধরনের মানসিক রোগ হয়ে যা নোমোফোবিয়া নামে পরিচিত।
এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে।
আপনার প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করবেন না মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। যখন প্রয়োজন
হবে শুধু তখনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন। তাহলে আমরা জানতে পারলাম মোবাইল বা
পিসি স্ক্রিনের আলো ক্ষতিকারক প্রভাবসমূহ।
দিনে কত ঘন্টা মোবাইল চালানো উচিত
অনেকে আমাদেরকে প্রশ্ন করে থাকেন দিনে কত ঘন্টা মোবাইল চালানো উচিত। তাহলে
চলুন জেনে আসি দিনে কত ঘন্টা মোবাইল চালানো উচিত।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি যুগকে প্রায়শই "মোবাইলের যুগ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
যেহেতু আমরা সকলেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি।দুর্ভাগ্যজনক সত্য হল যে অনেক
অভিভাবক-সাধারণভাবে-জানেন না কীভাবে মোবাইল ডিভাইসগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে
হয়। আর এ কারণে তাদের সন্তানের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ক্ষতিকর কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। আমাদের অনেক অভিভাবকই শখ করে আমাদের ছোট বাচ্চাদের ফোন কিনে দিয়ে
থাকেন। ফলে বাচ্চাগুলো ছোট কাল থেকেই মোবাইল ফোন ব্যবহারে
অধিক আগ্রহ পোষণ করে। যা তাদের ব্রেইন এবং চোখকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।একটি
সমীক্ষা অনুযায়ী, দৈনিক মোবাইল ফোন ব্যবহার তিন ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা
উচিত। এটি ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য বা দৃষ্টিশক্তিকে তেমন ক্ষতি করে না।
আরো পড়ুনঃ চোখের যত্নে করণীয় কি?
তবে আমি বলবো আপনারা অবশ্যই ২৪ ঘন্টার মধ্যে সর্বনিম্ন ২ ঘন্টা মোবাইল ফোন
ব্যবহার করবেন যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। তবে আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট
বা ছাত্র-ছাত্রী হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের দিনে ৩০-৬০ মিনিট ব্যবহার করা উত্তম।
কারণ একজন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করা খুবই ক্ষতিকর। ফলে
ছাত্রছাত্রী পড়াশোনায় মনোযোগ বসতে পারে না। তাদের পড়াশোনা ক্ষতি হয়। তাই
ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো তারা অবশ্যই ৩০ মিনিট বা ৬০ মিনিট এর বেশি মোবাইল ফোন
ব্যবহার করবেন না। আর অবশ্যই যে কোন একটি টাইমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন। আর
ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনার সময় কমপক্ষে ১০ হাত দূরে মোবাইল ফোন রেখে আসবেন।
তাহলে আমরা জানতে পারলাম দিনে কত ঘন্টা মোবাইল চালানো উচিত।
মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায়
আমরা এখন মোবাইল বা পিসি স্ক্রিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায় সমূহ
নিয়ে আলোচনা করব কারণ সবকিছুই প্রতিরোধ-প্রতিকার রয়েছে। আজকে আমরা তা জানবো।
- প্রতি তিন থেকে চার সেকেন্ডে পরপর একবার আপনার চোখের পাতা ফেলতে বা ব্লিঙ্ক করার চেষ্টা করুন। আপনি যতই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করুন, আপনি যদি পলক না ফেলেন তবে আপনার চোখের পাতার ঝিল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- কখনোই মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনে একটানা বসে থাকবেন না। প্রতি ৩০ মিনিটে দুই থেকে তিন মিনিট মোবাইল ও কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে বিরত থাকুন।
- কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন কে চোখ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখুন। তবে বেশিদূর বা বেশি কাছে আনা যাবে না। মোবাইল ক্ষেত্রে অবশ্যই ২৫ সেন্টিমিটারের বেশি দূরে রাখতে হবে। আর কম্পিউটার এটা আপনি নিজে ঠিক করুন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কত দূরে রাখবেন।
- দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রিন ব্যবহার হলে চোখের রেটিনের ক্ষতি হতে পারে। তাই অবশ্যই চোখের পাতা বারবার ব্লিঙ্ক বা চোখের পলক ফেলুন। আর নির্দিষ্ট সময় পর পর রেস্ট নিন।
- একটানা কখনো কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনে বসে থাকবেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু নড়াচড়া করুন।
- মোবাইল ব্যবহার করলে অবশ্যই মোবাইল ফোনে থাকা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করবেন ফলে আপনার চোখ শতভাগ সুরক্ষিত থাকবে।
- আর কম্পিউটারের স্কিনের জন্য রয়েছে ব্লু লাইট ফিল্টার তবে প্রতিরোধী চশমা ব্যবহার করতে পারেন।
- চোখকে ভালো রাখতে অবশ্যই প্রচুর পানি এবং শাকসবজি খাবেন। আর কাজ করার সাথে ঘন ঘন চোখে পানি ঝাপটা দিবেন।
- রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় ডাক মোড ব্যবহার করতে পারেন। যা আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল স্কিন কালো হয়ে থাকবে ফলে ব্লু লাইট বা ক্ষতিকারক আলো কম নির্গত হবে।
ফলে আমরা মোবাইল বা পিসি স্কিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে
জানতে পারলাম। আপনারা উক্ত উপায় গুলো ফলো করে নিজের চোখে কম্পিউটার বা
মোবাইল স্কিনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। এর আগে আমরা জানতে পেরেছি মোবাইল
ফোন বা কম্পিউটার দিনে কত ঘন্টা ব্যবহার করা উচিত না জানলে উপরে থেকে পড়ে
আসুন।
আমাদের শেষ কথা
চোখ আমাদের মূল্যবান অঙ্গ। যা দিয়ে আমরা পৃথিবীর সবকিছু দেখতে পারি। এই
চোখকে আমরা মোবাইল বা পিসি স্কিনের ক্ষতিকারক আলো থেকে বাঁচাতে হবে। তাই আমরা
মোবাইল বা পিসি স্কিনের আলো থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানব যা আমরা উক্ত
আর্টিকেলটিতে উপস্থাপন করেছি। এছাড়া আমরা আরো জেনেছি অতিরিক্ত মোবাইলের
ক্ষতিকর প্রভাব, 24 ঘন্টায় কত ঘন্টা মোবাইল চালানো ক্ষতিকর বা 24 ঘন্টায় কত
ঘন্টা মোবাইল চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হয় উক্ত বিষয়গুলো আমরা জানতে
পারলাম। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
আর এমন নিত্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন।