দাঁতের ফিলিং কি? দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়?

দাঁতের ক্ষয় হয়ে গেলে দাঁতের চিকিৎসায় ফিলিং একটি আধুনিক প্রচলিত পদ্ধতি। এখানে দাঁতের ফিলিং বলতে দাঁতের গর্ত ভরাট করার বিষয়টি বোঝায়। অনেকেই আমরা দাঁতের ফিলিং সম্পর্কে জানি না।আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা দাঁতের ফিলিং কি? দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয় ইত্যাদি সহ আরো অনেক কিছু জানতে পারবো। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা দাঁতের ফিলিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। তাই দাঁতের ফিলিং কি? দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়? ইত্যাদি বিস্তারিত জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ দাঁতের ফিলিং কি? দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়?

ভূমিকা

দাঁত মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। এটিকে ভালো রাখা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত ক্ষয় হয়ে গেলে এর চিকিৎসায় আমরা দাঁতের ফিলিং করতে পারি। অনেকেই দাঁতের ফিলিং সম্পর্কে জানেন না আবার দাঁতের ফিলিং অর্থাৎ দাঁতের গর্ত ভরাট কথাটি শুনলে অনেকে ভয় পায় । ফলে ডাক্তারের কাছে যেতে অস্বস্তি বোধ করে। তাই সকলকে দাঁতের ফিলিং সম্পর্কে জানতে হবে এবং এটি কিভাবে করা হয় এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আমরা জানবো। চলুন আমরা দাঁতের ফিলিং কি এ সম্পর্কে জেনে আসি।

দাঁতের ফিলিং কি?

সাধারণত দাঁতের ফিলিং বলতে আমরা বুঝি দাঁতের গর্ত ভরাট করা এবং প্রতিস্থাপন করা। দাঁত ক্ষয় হয়ে গেলে আমরা এই নিয়মটি অর্থাৎ দাঁতের ফিলিং করতে পারি।আপনার দাঁতের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে, স্থান বা গর্তগুলি পূরণ করতে, চেহারা পুনরুদ্ধার করতে এবং গুরুতর ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য সঠিক উপাদান ব্যবহার করে দাঁতের ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। দাঁত পুনরুদ্ধার বা দাঁত পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য ফিলিং ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটিকে ফিলিং বলা হয়। ফিলিং মূলত দুই প্রকার।যথা- অস্থায়ী এবং স্থায়ী।

অনেকে আপনারা প্রশ্ন করে থাকেন দাঁতের ফিলিং করা কেন জরুরি? আপনার দাঁত যদি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, আঘাত লেগে ভেঙে যাওয়া, তাছাড়া দাঁতের ছিদ্র, গর্ত হলে ফিলিং করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ সময় ফিলিং না করলে দাঁতের অবস্থা অর্থাৎ দাঁতের ব্যথা গুরুতর হলে তখন আর ফিলিং করে কাজ হবে না। তাই আগে থেকে দাঁতকে সুস্থ রাখতে এবং খরচ কমাতে দাঁতের ফিলিং করা জরুরী। দাঁতের ফিলিং করলে আপনার দাঁত আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। এখন আমরা দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়? এ সম্পর্কে জানব।

দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়?

দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। নিচে দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়? সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

দাঁত ভরাট করার জন্য, ডেন্টিস্ট প্রথমে দাঁতের ফিলিংটি ভালভাবে পরিষ্কার করার পরে এবং দাঁতের গর্ত থেকে ময়লা পরিষ্কার করার পরে একটি অস্থায়ী ফিলিং করে দিবেন। যদি ছিদ্র বড় হয়ে থাকে তাহলে রোগীকে অস্থায়ী ফিলিং করে ১০ থেকে ২০ দিন অবজারভেশনে রাখতে হয়।অবজারভেশনে রাখা অবস্থায় যদি কোন ধরনের ব্যথা বা শিরশিরানি না হয়। এরপর অস্থায়ী ফিলিং তুলে ফেলে দিয়ে স্থায়ী ফিলিং করতে হবে।

একইভাবে স্থায়ী ফিলিং করার পূর্বে আগের মতই সম্পূর্ণ দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ফিলিং করার যন্ত্রপাতি গুলো দাঁতে স্থাপন করতে হবে । সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে দাঁত ফিলিং দ্রুত শেষ হবে। দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয়? আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন।

তাহলে আমরা জানতে পারলাম কিভাবে দাঁতের ফিলিং করা হয়? এখন আমরা নিচে দাঁতে ফিলিং সম্পর্কে আরো অনেক কিছু যেমনঃ দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয়,দাঁতের ফিলিং এর খরচ,দাঁতের ফিলিং করার পর ব্যাথা হলে করণীয় ,দাঁত ফিলিং এর পার্শপ্রতিক্রিয়া সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে চাইলে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয়

ডেন্টাল ফিলিং করার পর, করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। দাঁত ভরাট করার পরের পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে না করা হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতএব, কোনো সমস্যা এড়াতে আপনাকে যত্ন সহকারে দাঁতের ফিলিং করার পর করনীয় কাজ গুলির নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।

শক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুনঃ আপনি যদি দাঁতের ফিলিং করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে শক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।আপনি যদি দাঁত ফিলিং করার পরে শক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন, তবে দাঁতের ফিলিং ক্ষতিগ্রস্ত এবং সমস্যা হতে পারে। তাই আপনি দাঁতে ফিলিং করা অবস্থায় সব সময় শক্ত খাবার খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলবেন।

খাবার খেতে হলে সাবধানে খেতে হবেঃ সব খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। কারণ খাবারের শক্ত উপাদান খাওয়ার সময় কিছু অপ্রত্যাশিতভাবে তাতে আটকে গেলে আপনার দাঁতের ফিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। খাওয়ার কাজে সতর্কতা প্রয়োজন।

চুইংগাম জাতীয় খাদ্য না খাওয়াঃ আপনার যদি দাঁতের কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে চুইংগাম জাতীয় খাদ্য খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত এবং দাঁতের ফিলিংস করিয়ে থাকলে চুইংগাম থেকে দূরে থাকুন। কারণ দাঁতের ফিলিং উঠে চলে আসতে পারে চুইংগাম এর আঠার সাথে। তাই চুইংগাম জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকবেন।

বেশি ঠাণ্ডা কিংবা গরম খাবার পরিহার করাঃ ফিলিং করার পর খুব গরম বা ঠান্ডা কিছু খাবেন না। কারণ অত্যধিক গরম বা ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া আপনার দাঁত ফিলিং বা ভরাটের ক্ষতি করতে পারে। দাঁতের ফিলিংস ঠিক রাখতে, খুব গরম বা ঠান্ডা খাবার থেকে দূরে থাকুন।

অতিরিক্ত তরল খাবার পরিহার করাঃ দাঁত ফিলিং করার পরে, তরল খাবার খাওয়া উচিত নয়। কারণ দাঁত ফিলিং করার পরে যদি আপনি অতিরিক্ত তরল খাবার খেয়ে থাকেন ফলে তরল খাবার গুলো দাঁতের গোড়া দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।। তাই দাঁতের কাজ শেষ করার পর তরল খাবার থেকে দূরে থাকুন।

তাহলে আমরা দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এরপরে আমরা দাঁতের ফিলিং করার পর ব্যাথা হলে করণীয় এবংদাঁতের ফিলিং এর খরচ সে সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

দাঁতের ফিলিং করার পর ব্যাথা হলে করণীয় 

একটি ফিলিং স্থাপন করার পরে দাঁতের অস্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হলে কী করবেন তা জানুন। এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই সেই ব্যক্তির অর্থাৎ ডাক্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে যার কাছে আপনি দাঁতের ফিলিং করিয়াছিলেন। অস্বস্তি হালকা হলে নিচের উপায় অনুসরণ করুন।দাঁতের ফিলিং করার পর ব্যাথা হলে করণীয় কি? সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
  • ওষুধগুলি কেবলমাত্র একজন ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত হিসাবে গ্রহণ করবেন।
  • খুব গরম বা ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অ্যাসিডযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন, যেমন টক দই, লেবু এবং অন্যান্য।
  • প্রায়শই একটি টুথব্রাশ এবং উন্নত মানের টুথপেস্ট ব্যবহার করে ব্রাশ করবেন।
  • দাঁতের সমস্যায়, দাঁতের বিপরীত দিকে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
তাহলে আমরা জানতে পারলাম দাঁতের ফিলিং করার পর ব্যাথা হলে করণীয়। নিচে আমরা দাঁতের ফিলিং এর খরচ সম্পর্কে জানতে পারব।

দাঁতের ফিলিং এর খরচ

ডেন্টাল ফিলিং সের দাম অর্থাৎ খরচ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয় না। কারণ ডেন্টাল ফিলিং এর খরচ ডেন্টিস্টের অফিস এবং ক্লিনিক ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। তারা শুধুমাত্র এইভাবে ভরাটের খরচ আপনাকে প্রদান করতে পারে। আরেকটি কারণ হল ডেন্টাল ফিলিংসের খরচ তাদের বিস্তৃত পরিসরের কারণে অনুমান করা কঠিন। অতএব, ডেন্টাল ফিলিং কত খরচ হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

একটি অস্থায়ী ফিলিং একটি স্থায়ী ফিলিং এর তুলনায় কম ব্যয়বহুল।তাই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না দাঁতের ফিলিং এর খরচ কত হবে। তবে আমাদের জানামতে দাঁতের ফিলিং খরচ সাধারণত ২০০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এটা সাধারণত ক্লিনিক ভেদে পরিবর্তনীয়। তাই ফিলিং এর খরচ জানতে অবশ্যই আপনি যে ক্লিনিকে করাবেন সেখানে খোঁজ নিয়ে নিবেন।

তাহলে আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন যে দাঁতের ফিলিং এর খরচ কত হতে পারে। ইতিপূর্বে দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয় সম্পর্কে জেনে এসেছি। এখন আমরা দাঁতের ফিলিং করার কত বছর স্থায়ী হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

দাঁতের ফিলিং করার কত বছর স্থায়ী হয়

আপনি অনেকে জানতে চেয়েছেন দাঁতের ফিলিং করার কত বছর স্থায়ী হয়। আমার এই নিয়ে কিছু আলোচনা করছি। আপনি যদি ভাল মানের ফিলিং করিয়া থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে অনেকদিন থাকবে। আর আপনি যদি ভাল মানের ফিলিং অর্থাৎ একটি খারাপ মানের ডেন্টাল ফিলিং খুব অল্প সময়ের পরে ভেঙে যেতে পারে। দাঁতের ফিলিং করা যত ভালো হবে ততদিন ফিলিং টিকে থাকবে। তবে ভালোভাবে ভালো মানের দাঁতের ফিল্ম করিয়া থাকেন সেক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত এই ফিলিং থাকবে।

তাহলে উপরোক্ত আলোচনায় আমরা এখন পর্যন্ত দাঁতের ফিলিং কি?দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয় দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয় দাঁতের ফিলিং করার পর ব্যাথা হলে করণীয় দাঁতের ফিলিং এর খরচ দাঁতের ফিলিং করার কত বছর স্থায়ী হয় এগুলো জানতে পারলাম। আশা করি আপনারা সবকিছু বুঝতে পারছেন। এখন আমরা দাঁত ফিলিং এর পার্শপ্রতিক্রিয়া কি কি হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।

দাঁত ফিলিং এর পার্শপ্রতিক্রিয়া

দাঁতে ফিলিং করাচ্ছেন তবে সাবধান থাকতে হবে। এতে কোন কিছু ভুল হয়ে গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
  • ভরাট বা ফিলিং করার সময়, পারদ আপনার রক্তে প্রবেশ করে। মস্তিষ্ক, হার্ট, কিডনি, ফুসফুস সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে শিশুদের অটিজম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
  • যখন একটি দাঁতের স্থায়ী ফিলিং প্রয়োজন হয়, এমালগাম ফিলিং সময় পারদ বা মার্কারি ব্যবহার করা হয়। । এই পারদ থেকে একটি মুখের আলসার রোগ সৃষ্টি করতে পারে। আরও ক্ষতি হতে পারে।
  • ফিলিং করার সময় যদি অতিরিক্ত পরিমাণ পারদ বা মার্কারি প্রবেশ করে তাহলে আমাদের দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব আনে। এর ফলে হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতি এছাড়াও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
উক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে দাঁতের ফিলিং করাতে হবে। তাহলে আমরা জানলাম দাঁত ফিলিং এর পার্শপ্রতিক্রিয়া।

শেষ কথা

আশা করি আপনারা দাঁতের ফিলিং কি এবং দাঁতের ফিলিং কিভাবে করা হয় এগুলো বিষয়ে জানতে পারলেন। এছাড়াও আরো বিষয়ে জানলেন দাঁতের ফিলিং এর খরচ দাঁতের ফিলিং করার পর করণীয় সহ অনেক কিছু। তাহলে আপনারা দাঁতের ফিলিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন আশা করছি। দাঁত একটি মূল্যবান সম্পদ। তাই দাঁত ভালো রাখার জন্য ফিলিং করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর নিয়মিত এমন আপডেট পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url