কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় বিস্তারিত জেনে নিন

আধুনিক বিশ্বে সকল কাজের জন্য আমাদের নিয়মিত সঙ্গী হল একটি কম্পিউটার। যাইহোক, যেহেতু আপনি একটি কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর জন্য সমাধান খুঁজছেন, তার মানে আপনার কম্পিউটারটি ধীরে কাজ করছে। ফলে আপনি বুঝতে পারছেন আপনার কম্পিউটার এর গতি আপনার কাজের গতি চেয়ে কম। উপরন্তু, সমস্যাটি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে প্রভাবিত করে। ফলস্বরূপ, অধিকাংশ মানুষ দ্রুত কম্পিউটার পরিবর্তন করতে অক্ষম। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায়। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আপনার কম্পিউটারে যদি ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। আপনি যদি কম্পিউটারকে কে ফাস্ট করতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার ফার্স্ট করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায়

ভূমিকা

আমরা সকলেই কমবেশি কম্পিউটারের ব্যবহার করে থাকি। এই কম্পিউটার যখন নতুন অবস্থায় থাকে তখন খুব ফাস্ট ভাবে কাজ করে। কিন্তু কম্পিউটারের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা ধীরগতিসম্পন্ন হতে থাকে। আপনি চাইলে এই কম্পিউটার কে আবার আগের নতুনের মতো ফাস্ট করতে পারবেন।একবার আপনার কম্পিউটারে উইন্ডোজ ইন্সটল হয়ে গেলে, কোনো পারফরম্যান্স সমস্যার সম্মুখীন না হয়ে এটি দুই থেকে তিন বছরের জন্য ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেক সময় দেখবেন আপনার কম্পিউটারে উইন্ডোজ ইনস্টল করার পরও আপনার কাছে মনে হবে এটি যথেষ্ট ধীর হয়ে গেছে।আপনি কীভাবে আপনার পিসিতে উইন্ডোজ ব্যবহার করেন তার উপর নির্ভর করে, উইন্ডোজ ধীর হতে পারে। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে যে কোনও পণ্য বা জিনিস আরও ভাল পারফর্ম করতে পারে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমটি কীভাবে ভাল পারফর্ম করবে যদি আপনি এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেন। আপনি যদি আপনার কম্পিউটারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করেন তাহলে সব সময় আপনার কম্পিউটার ফাস্ট কাজ করবে। এজন্য আপনাকে কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।

কম্পিউটার কি

আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে বা কম্পিউটার কি এবং কি করলে কম্পিউটার স্লো হয়ে যায় এগুলো বিষয় সম্পর্কে তেমন জানে না।সহজভাবে ব্যাখ্যা করা গেলে, একটি কম্পিউটার হল একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার গতি এবং নির্ভুলতা রয়েছে বিভিন্ন ধরণের গাণিতিক এবং জটিল সমস্যার দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে উত্তর দিতে পারে। আদিম ক্যালকুলেটর হিসাবে তাদের প্রাথমিক উদ্ভাবন সত্ত্বেও আধুনিক কম্পিউটারগুলি গণনা ছাড়াও বিস্তৃত ফাংশন পরিচালনা করতে পারে। কম্পিউটার হলো একটি প্রোগ্রাম দ্বারা পরিচালিত ডিভাইস। এই প্রোগ্রাম মাঝে মাঝে স্লো বা ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যায়। এটিকে ফাস্ট করার উপায় নিয়ে আমরা হাজির। নিচে আমরা কম্পিউটার কেন স্লো হয় তা নিয়ে আলোচনা করব।

কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ কি?

দৈনন্দিন জীবনে আমার কম্পিউটার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। এই ব্যবহার করার ফলে কম্পিউটার প্রোগ্রামের বিভিন্ন সফটওয়্যার এর junk অথবা অপ্রয়োজনীয় ফাইল জমা হতে থাকে যা আমাদের কোন কাজে আসে না। এর ফলে কম্পিউটার ধীরগতি সম্পন্ন বা স্লো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে কম্পিউটার স্লো হতে পারে। নিচে কম্পিউটার স্লো হওয়ারকয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো।
  • অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামস ইনস্টল করে রাখা
  • হার্ডডিক্স ফুল করে রাখা
  • নিম্নমানের কমদামি হার্ডওয়ার ব্যবহার করা
  • কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হলে
  • কম্পিউটার আপডেট না দেওয়া
  • কম্পিউটার কুলিং সিস্টেম আপডেট না করা
  • অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করা
  • কম্পিউটারের র‍্যাম কম হলে
উপরোক্ত কারণগুলোর কারণে কম্পিউটার সাধারণত ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।হার্ডওয়ারের কারণে কম্পিউটার স্লো হয়। এছাড়া কম্পিউটারের উইন্ডোজ অর্থাৎ প্রোগ্রাম ঠিকমতো ইন্সটল না করলে কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে। নিচে আমরা কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় সম্পর্কে জানব।

উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করে উইন্ডোজ ফাস্ট করা

উইন্ডোজ পুনরায় ইনস্টল করার মাধ্যমে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সংশোধন করা যেতে পারে অর্থাৎ আপনি উইন্ডোজ কে ফাস্ট করতে পারবেন। আমরা সকলে জানি কম্পিউটারে উইন্ডোজ সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত আপনার যদি সফটওয়্যারটি স্লো হয় তাহলে কম্পিউটার তো ধীর গতিতেকাজ করবেই। তবে ভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় ব্যবহার করেও যদি আপনার পিসির উইন্ডোজ ধীরগতির হয় তবে আপনার কম্পিউটারে নতুন উইন্ডোজ ইনস্টল করতে হবে।যাইহোক, Windows 7 এ নতুন উইন্ডোজ ইন্সটল করতে কোনো সমস্যা নেই।

আপনি আপনার কম্পিউটারে সেটিংসে উইন্ডোজ রিসেট নামে একটি ফিউচার পাবেন যেটি ব্যবহার করে আপনার উইন্ডোজ অটোমেটিক ক্লিন আপ হবে ফলে উইন্ডোজটি ভালোমতো কাজ করবে। সেখানে, উইন্ডোজ তার সমস্ত সেটিংস এবং প্রোগ্রাম সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার পরে আপনার সামনে নিজেকে পুনরায় ইনস্টল করবে। উপরন্তু, আপনি যদি একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হন, আপনি একটি DVD ব্যবহার করে স্ক্র্যাচ থেকে উইন্ডোজ ইনস্টল করতে পারেন।

অ্যানিমেশন কমিয়ে উইন্ডোজ ফাস্ট করা

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে বিভিন্ন অ্যানিমেশন ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি উইন্ডো চালু হওয়ার পরে এটিকে সর্বাধিক এবং ছোট করা হয়, তখন একটি নতুন অ্যানিমেশন প্রদর্শিত হয়। এই জাতীয় অ্যানিমেশনগুলি বন্ধ করে, আমরা আমাদের কম্পিউটারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের গতি বাড়াতে পারি।

অ্যানিমেশন কমিয়ে আনার জন্য প্রথমে আপনাকে যেতে হবে start up menu তে এরপর এখান থেকে settings এ যাবেন। সেটিংস এ যাওয়ার পর সার্চ বারে সার্চ দিন view advanced system settings ক্লিক করে advanced অপশন পাবেন। এখানে সেটিংস অপশনে গিয়ে custom অপশন থেকে সকল কিছু unselect করবেন এবং ok ক্লিক করলে অ্যানিমেশন অফ হয়ে যাবে। ফলে আপনার কম্পিউটারটি অনেক ফাস্ট হয়ে যাবে। তাহলে আমরা কম্পিউটার ফাস্ট করার আরেকটি অ্যাডভান্স উপায় জানলাম।

কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায়

আমরা কম্পিউটার ফাস্ট করার বিস্তারিত উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
C ড্রাইভ খালি রাখাঃ আমাদের কম্পিউটার সকল ধরনের system files এবং program files গুলো c-drive এর মধ্যে জমা হয়ে থাকে। এর ফলে সি ড্রাইভ এর জায়গা কমতে থাকে। সাধারণত সি ড্রাইভ অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ফাইল জমা হয় ফলে জায়গায় অল্প থাকে সি ড্রাইভে এ তখন কম্পিউটার স্লো কাজ করে। যার ফলে কম্পিউটার মাঝে মাঝে হ্যাং (hang) হয়ে যেতে পারে। এজন্য অবশ্যই সি ড্রাইভ এ কোনো সময় videos, movies বা কোন ফাইল রাখা যাবে না। এজন্য সি ড্রাইভ সবসময় খালি রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং ফাইল ছাড়া কিছু রাখা যাবে না। আপনারা অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আলাদাভাবে SSD ব্যবহার করতে পারেন। ফলে আপনার কম্পিউটার ৫০% পর্যন্ত ফাস্ট হবে।

ডিস্ক ক্লিনঃ অনেক দিন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করার ফলে কম্পিউটারে অপ্রয়োজনীয় সিস্টেম ফাইল জমা হয়। যার জন্য আমাদের সিস্টেম স্লো কাজ করে। এগুলো ডিলেট করার জন্য disk cleanup ব্যবহার করতে পারেন।

Temps Files ডিলেট ঃআপনার কম্পিউটার অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় ফাইল আছে যা আপনি সরাসরি ডিলিট করতে পারবেন না। এগুলো ডিলিট করার জন্য আপনাকে RUN command এ যেতে হবে।সেখানে %temp% লিখে Enter বাটুনে ক্লিক করতে হবে।temp ফাইলগুলো আসলে সবগুলো সিলেক্ট করে ডিলিট করে দিন। ফলে আপনার কম্পিউটার অনেক ফাস্ট হয়ে যাবে।

Recycle folder খালিঃ আমাদের কম্পিউটার এ সব সময় Recycle folder খালি রাখতে হবে। আপনি যখন কম্পিউটার থেকে কোনো কিছু ডিলেট করবেন তখন সেটা Recycle Bin এ গিয়ে জমা হবে। এতে করে অধিক পরিমানে জমা হলে কম্পিউটার স্লো কাজ করে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ RAMঃ ধীরগতির কম্পিউটারের র‍্যাম মেমরি বাড়ানোর ফলে অনেক দ্রুত কাজ হয়। এটি সিস্টেমের অপর্যাপ্ত RAM মেমরির ফলাফল। এতে কম্পিউটার সিস্টেম ব্যাহত হয় এবং মাঝে মাঝে এটি হ্যাং হয়ে যায়। এর জন্য কম্পিউটারে পর্যাপ্ত র‌্যাম মেমরি ফ্রি রাখা প্রয়োজন। এটি যত বেশি মুক্তি পাবে তত দ্রুত কাজ করবে।

Start-Up Program Uninstall: একটি কম্পিউটারের স্টার্টআপ প্রোগ্রামকে একটি ফাংশন বা বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়। পটভূমিতে কম্পিউটার চালু হওয়ার সাথে সাথেই এটি চালু হয়ে যায়। অতিরিক্তভাবে, প্রোগ্রামগুলি ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে। ফলাফল হল কম্পিউটার খুব ধীর গতিতে চলে। স্টার্টআপে চলা প্রোগ্রামগুলিকে এর জন্য বাদ দেওয়া বা সরিয়ে দেওয়া উচিত।

কম্পিউটার ভাইরাসঃ আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে কিনা তা চেক করে দেখতে হবে। ভাইরাস আপনার কম্পিউটারকে ধীরগতি সম্পন্ন করে তোলে। ভাইরাস সি ড্রাইভ সহ সকল ড্রাইভে নির্দিষ্ট অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর ফাইল জমা করে। যতদিন থাকবে ততদিন আপনার সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফলে আপনার কম্পিউটার অত্যাধিক স্লো হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে প্রচুর হ্যাং করবে। ভাইরাসকে রিমুভ করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে ভাইরাস ক্লিন আপ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি একটি পেইড এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। পেইড সফটওয়্যার গুলো ভালোমতো কাজ করতে পারে।

এছাড়া আরো উপায় যেমনঃ 
  • আপনার কম্পিউটার আপডেট করুন. আপনার কম্পিউটার আপডেট করা সাধারণত এটি দ্রুত চালাতে সাহায্য করবে
  • বন্ধ করুন এবং/অথবা আপনার কম্পিউটার নিয়মিত রিস্টার্ট করুন
  • আপনার RAM আপগ্রেড করুন
  • অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম আনইনস্টল করুন
  • অস্থায়ী ফাইল মুছুন
  • আপনার প্রয়োজন নেই এমন বড় ফাইল মুছুন
  • আপনার ট্যাব বন্ধ করুন
  • অটো-লঞ্চিং প্রোগ্রাম অক্ষম করুন।
তাহলে আমরা সকলে কম্পিউটারকে ফাস্ট করার বিস্তারিত উপায় জানলাম। উপরোক্ত উপায় গুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটারকে fast করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

আপনাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে সকল জিনিসের একটি নির্দিষ্ট কার্যক্ষমতা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর এগুলো তাদের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে অর্থাৎ হারিয়ে ফেলে। তেমনি কম্পিউটার ও একটি নির্দিষ্ট সময় পর ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যায়। এ কম্পিউটারকে ফাস্ট করার জন্য আপনাকে কম্পিউটারের হার্ডওয়ার এ পরিবর্তন আনতে হবে। আশা করি আপনারা আপনাদের কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় জানতে পেরেছেন। যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এমন পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url