অ্যালোভেরা কি? অ্যালোভেরা এর উপকারিতা বিস্তারিত জানুন
প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধ বা উপাদান হিসেবে এলোভেরার ব্যবহার হয়ে আসছে। এলোভেরা উপকারি তা কারো অজানা নয়। একে ঘৃতকুমারীও বলা হয়ে থাকে।প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উপাদানটি হচ্ছে ঘৃতকুমারী বা এলোভেরা ।এটি সম্পর্কে জানে না এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনি যদি অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
অ্যালোভেরা কি? অ্যালোভেরা এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ অ্যালোভেরা কি? অ্যালোভেরা এর উপকারিতা
- ভূমিকা
- অ্যালোভেরা কি
- অ্যালোভেরা এর উপকারিতা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরা
- এলোভেরা চুলের উপকারিতা
- অ্যালোভেরা চুলে কিভাবে ব্যবহার করব
- এলোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়ম
- আমাদের শেষ কথা
ভূমিকা
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী উপকারী উদ্ভিদ।ঘৃতকুমারী একটি বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ
এবং যা দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতই প্রায়।সব ধরনের জমিতেই ঘৃতকুমারী বা
অ্যালোভেরা চাষ করা সম্ভব, তবে দোঁআশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের
বৃদ্ধি ভালো হয়ে থাকে। অ্যালোভেরা ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহার করা
হয়।এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আছে, যা শরীরের নানারকম উপকার
করে।এর অসাধারণ গুনের কারণে এটি ত্বক পরিচর্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর উপকারিতার কোনো সীমা এবংপরিসীমা নেই। এটি বাজারে
সহজলভ্য। উপরোক্ত আমরা অ্যালোভেরা কি? অ্যালোভেরা এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা
করব।
অ্যালোভেরা কি
অ্যালোভেরা আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে মিশরে উৎপত্তি হয়েছিল। এটি একটি ভেষজ
উদ্ভিদ। যা বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহার হয়। প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ
চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। অ্যালোভেরার মধ্যে ভেতরে লালার মত
পিচ্ছিল শাঁস থাকে। যা দেখতে পিচ্ছিল লালার মতো। অ্যালোভেরাতে রয়েছে ২০
রকমের খনিজ পদার্থ যা মানবদেহের জন্য অতান্ত প্রয়োজনীয়।অ্যালোভেরাতে নানা
ধরনের ভেষজ ঔষধি গুনাগুন রয়েছে।অ্যালোভেরাতে উপস্থিত রয়েছে বিশেষ ঔষধি
গুনাগুন, যা মানবদেহের ছোটখাটো রোগ থেকে খুব দ্রুত নিরাময় দিতে পারে।
অ্যালোভেরার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই আজ আমরা আপনাদের সামনে
অ্যালোভেরার উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে হাজির হয়েছি।
অ্যালোভেরা এর উপকারিতা
অ্যালোভেরা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই আমরা এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
ওজন কমাতে অ্যালোভেরা
ওজন কমাতে এলোভেরার জুস অনেক উপকারী।অ্যালোভেরা জুসের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি
উপাদান শরীরের জমে থাকা মেদ দূর করে থাকে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই
ওজন কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরাতে রয়েছে অ্যালোইন নামক প্রোটিন, যা দেহে
জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে এক চামচ
অ্যালোভেরার গ্রহণ হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে, যা ওজন হ্রাস বা কমতে
সাহায্য করে। এটি বিপাকক্রিয়া বাড়াতেও সহায়ক, যার ফলে শরীরে জমে থাকা
ফ্যাট খুব দ্রুত কমে যায়।
হার্ট ও দাঁতের যত্নে
অ্যালোভেরায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
উপাদান, যা মানুষের দেহের কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে আনে।এটি সাধারণত দূষিত
রক্ত দেহ থেকে বের করে দেয় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
অ্যালোভেরা জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা ও ইনফেকশন নিবারণে সহায়তা করে থাকে।
এছাড়াও অ্যালোভেরার জুস শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে।
চুলের যত্নে
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা এর উপকারিতা অপরিসীম। চুলের শুষ্ক ভাব এবং ত্বকে
চুলকানি দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যালোভেরাতে
রয়েছে বিভিন্ন উপাদান যেমনঃ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল যা চুল
পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে আমলকীর
রস মিশিয়ে চুলে লাগালে এতে চুলের উজ্জ্বলতাও বেড়ে যায়। এছাড়াও চুলে পুষ্টির
যোগান দেয় আর চুলকে ঘন লম্বা করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যালোভেরায় রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইম যা আপনার চুলের স্ক্যাল্পের ড্যামেজকে
সারিয়ে তুলতে পারে।
ত্বকের আর্দ্রতা বজায়
ত্বকের ছোটখাটো কাটা-পোড়া, অ্যালার্জি, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি সারাতে
অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। সরাসরি পাতা
থেকে জেলটা নিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন।শীতের সময়টা শেষ হওয়ার সাথে সাথে
ত্বকের আর্দ্রতা কমতে থাকে। তাই শুষ্ক ত্বকে ব্যবহার করা যায় অ্যালোভেরা জেল।
ফলে ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা পাবে।অ্যালোভেরা জেল, মধু, দুধ, হলুদ অথবা সামান্য
দুধের সর মিশিয়ে মুখে মাস্কের মতো লাগালে ব্রণ দূর করতে কাজ করে। রোদে পোড়া
ত্বকে অ্যালোভেরা, শসার রস আর দইয়ের মিশ্রণ লাগালে ত্বকের উজ্জল হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যতে উপকার করে
অ্যালোভেরার পাতায় নিচের হলুদ রঙের আঠালো একটি পদার্থ থাকে, যা উপাদানটি কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ হিসেবে দারুণ কার্যকর। তবে পাচনতন্ত্রের অন্য কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবে না এটা। তাই এমন সমস্যায় অ্যালোভেরা নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।
এছাড়াও বিভিন্ন কাজে অ্যালোভেরা ব্যবহার হয়ে থাকে। অ্যালোভেরা বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে।রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে আনার সক্ষমতা রয়েছে এলোভেরায়, যার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।অ্যালোভেরা রয়েছে ভিটামিন সি যা দাঁত কে রাখে সুস্থ এবং মজবুত। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগকে সারিয়ে তোলে এই অ্যালোভেরা। এটি হজমশক্তিও বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরা
আমরা জানি ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়।তবে রক্তের গ্লুকোজ এর
মাত্রা কমিয়ে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য অ্যালোভেরা জুস অত্যন্ত কার্যকরী।নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খেলে
ডায়াবেটিস এই মাত্রা কমে আসে।অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক শক্তিশালী
উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।বহু প্রাচীন যুগ ধরে
ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়েছে অ্যালোভেরার জুস। এই পানীয়
নিয়মিত সেবন করলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
করা সহজ হয়।অ্যালোভেরা জুস বা জেল প্রাকৃতিক ভাবে রক্তে চিনির পরিমাণ কম করে।
তাই আমরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারি।
অ্যালোভেরা চুলের উপকারিতা
চুলের উপকারে অ্যালোভেরা অধিক কার্যকরী।চুলের শুষ্ক ভাব দূর করার জন্য
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারবেন। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং
অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই
অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে এতে চুলের উজ্জ্বলতা
বেড়ে যাবে এবং শুষ্কতা কমে যাবে।এটি চুলে পুষ্টির যোগান দেয় আর চুলকে ঘন লম্বা
করে থাকে। এছাড়া মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর মাধ্যমে চুলকে
শক্তিশালী করতে পারে। আমরা জানলাম অ্যালোভেরা কিভাবে চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত
করতে পারে।
অ্যালোভেরা চুলে কিভাবে ব্যবহার করব
অ্যালোভেরা যেহেতু চুলের বৃদ্ধির জন্য নিজেই একটি আদর্শ ও কার্যকরী ঔষধ
হিসাবে কাজ করতে পারে, তবে এটি যদি অন্যান্য কিছু জিনিসের সাথে মিলিত করা হয়
ফলে এর প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করতে পারবে। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই সেই
সব উপাদান সম্পর্কে যা দিয়ে অ্যালোভেরাতে ব্যবহার করা যায়। যা
অ্যালোভেরার গুণগতমান বৃদ্ধি করে।
অ্যালোভেরার এবং নারিকেল তেলের মিশ্রণ অতুলনীয়ভাবে কন্ডিশনারের কাজ করে থাকে
যা মাথার ত্বকের আর্দ্রতাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে ।এই আবরণটি আপনাকে চুলকে
একেবারে ঠিকঠাক রাখে যাতে চুলের মূল আগা নষ্ট না হয় আর আপনাকে বারবার চুল
ছাটাই না করতে হয় । একটি পাত্রে বা কাঁপে ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের
সঙ্গে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল আর ১ টেবিল চামচ মধু মেশাতে হব। এবার মাথার
ত্বক এবং চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে প্রথমে লেপন করে নিয়ে মিশ্রণ লাগাতে নেমে আসতে
হবে চুলের মূল আগা পর্যন্ত যেহেতু সমস্ত চুল ভালোভাবে মিশ্রণ দিয়ে ঢাকা পড়ে
যাবে, তখন মাথায় শাওয়ার ক্যাপ পরে নিবেন ।আধঘণ্টা পরে চুলটা ধুয়ে ফেলবেন ।
দই ও অ্যালোভেরা চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ব্যবহার করতে পারবেন। তিন চামচ টক
দইয়ের সঙ্গে ২ চামচ অ্যালোভেরা মিশিয়ে প্রায় ২০ মিনিট ধরে মাথার ত্বকে মাসাজ
করবেন। পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিবেন চুল। পরে কন্ডিশনার শ্যাম্পু দিয়ে চুল
ধুয়ে নিবেন। এছাড়াও আরো অনেক কিছু মিশিয়ে অ্যালোভেরার সাথে ব্যবহার করা
যায়।
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়ম
গোলাপ জল এবং অ্যালোভেরা জেল একসঙ্গে মিশিয়ে ঘাড়ে এবং মুখে ব্যবহার
করতে পারবেন। ফলে বয়সের ছাপ,ত্বকের কালো দাগ, ব্রণের দাগ দ্রুত দূর করতেও
পারবেন। অ্যালোভেরা জেলের নিয়মিত ব্য়বহার ত্বকের অতিরিক্ত ময়লা, তেল, কালো
দাগ দূর করে ত্বক পরিষ্কার করে থাকে। মুখে উজ্জ্বল সতেজ ভাব ফুটিয়ে এনে
দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের দিনে বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরলে মুখের
জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে চাইলেও ঠান্ডা ফেস মাস্ক হিসেবে অ্যালোভেরা জেল
ব্যবহার করতে পারবেন।
হলুদ,মধু ও দই সামান্য পরিমাণে অ্যালোভেরার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন।
গরমেকালে ত্বকের যত্নে মধু একটি ভালো উপাদান। এজন্য ২ টেবিল চামচ
অ্যালোভেরা,১ চিমটি হলুদ, জেল ও ১/২ চা চামচ মধু ও কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল
একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্ট বানানো হয়ে গেলে এটি ত্বকে
লাগিয়ে বা লেপন করে ৩০ মিনিট রেখে দিন।৩০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিন।
আমাদের শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা সবাই জানতে পেরেছেন অ্যালোভেরার কত গুণ বা
উপকারিতা রয়েছে। অ্যালোভেরা দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। এর
উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না, অনেক উপকার করে থাকে এই অ্যালোভেরা। উপরে আমরা
অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই
পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। আর কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন
এবং কমেন্ট করে জানাবেন।