ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয় - ডায়ালাইসিস
কিডনি সম্পন্ন অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত
করার নাম ডায়ালাইসিস। মূলত ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত
করা হয়। আপনি যদি ডায়ালাইসিস কি কেন করা হয়, ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো
হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য
তাই দেরি না করে পোস্টটি সম্পন্ন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে
পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয়
ভুমিকা
কিডনি যখন বিকাল হয়ে যায়। তখন আমাদের ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন হয়।
ডায়ালাইসিস হল এমন একটি বিপাকীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে যাদের কিডনি
বা বৃক্ক সঠিক ভাবে কাজ করে না তাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ,
অপরিশোধিত রক্ত এবং বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত টক্সিন অপসারণ করা হয়। আমাদের
শরীরের প্রতি মুহূর্তে নানারকম বিপাকীয় প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এমন অবস্থায়
তৈরি হয় প্রচুর বর্জ্য পদার্থ। প্রতিদিন এসব বজ্র পদার্থ অপসারণ করার
জন্য কিডনি কাজ করে থাকে। এছাড়া কিডনি বিভিন্ন ধরনের বিপাকীয় কাজ করে থাকে।
শরীরে রক্তের ভারসাম্য রক্ষায় কিডনি কাজ অপরিসীম। ডায়াবেটিস,
উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি কারণে কিডনি ধীরে ধীরে বিকল হয়ে
যায়। কিডনি বিকাল হলে মূত্রের পরিমাণ কমে যাবে। রক্তে ক্রিয়েটিনিন
বৃদ্ধি পাবে। তখন রক্তের বর্জ্য দ্রব্যাদি অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট সময়
পর পর রোগীকে ডায়ালাইসিস করতে হয়।
ডায়ালাইসিস কত প্রকার ও কি কি?
ডায়ালাইসিস সাধারণত দুই ধরনের। যথাঃ
হেমোডায়ালাইসিস
এটি মূলত একটি মেশিনের সাহায্যে হেমোডায়ালাইসিস করা হয়। এ
প্রক্রিয়ায় মেশিনটি শরীরের বাইরে রোগীর হাতের ধমনীর সাথে সংযোজন করা
হয়।মেশিনের মধ্যকার ফিল্টারের সাহায্যে রক্ত পরিশোধন করে পুনরায় রোগীর দেহে
পাঠানো হয়। এতে অন্তত সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। এ
ডায়ালাইসিসে সাধারণত তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগে। ডায়ালাইসিসের সময়
শরীর থেকে সকল ধরনের অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ, অতিরিক্ত তরল নিষ্কাশন করা হয়।
পেরিটোনিয়াল
এতে মূলত বাড়িতে বসেই ডায়ালাইসিস করা হয়। তবে যন্ত্রের তেমন দরকার হয় না। এই
ডায়ালাইসিস এ পেটের ভেতর ক্যাথেটার স্থাপন করে ডায়ালাইসিস লিকুইড দেওয়া
হয়। পেরিটোনিয়াম নামের পর্দা টি ডায়ালাইসিসের কাজটি করে থাকে। এমন বিশেষ তরল
আমাদের দেশে পাওয়া ও প্রস্তুত হয় না বলে খরচ বেশি পড়ে। এছাড়া
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা না হলে সংক্রমণতা হতে পারে।
ডায়ালাইসিস করার নিয়ম
কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকেল হওয়ার পর রক্ত বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিশোধিত করার
নাম ডায়ালাইসিস। যে মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয় ডায়ালাইসিস। আর
এই পদ্ধতিটিকে ডায়ালাইসিস বলে। এ মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত
রোগীর হাতে কব্জির ধমনীর সাথে এবং অন্য প্রান্ত ওই হাতের কব্জির শিরা সাথে
সংযোজন করা হয়। ধমনী থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো
হয়।
এর প্রাচীর আংশিক বৈষমবদ্ধ হয় ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর
বর্জ্য পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের শিরার মধ্যে দিয়ে
দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করানো হয়। ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে
ডুবানো থাকে, যার গঠন দেখতে রক্তের প্লাজমার অনুরূপ হয়। এভাবে ডায়ালাইসিস
মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ ইউরিয়া এবং অন্যান্য
বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশিত হয়। তবে এতে অনেক খরচ ও ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ
প্রক্রিয়া।
কিডনি ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়?
ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালে
ডায়ালাইসিস করার জন্য যেতে হয়, তবে প্রতিদিন চার ঘণ্টা হিসাবে রক্ত পরিশোধন
করা হয়।কিডনি বিকলের শেষ পর্যায়ের রোগীদের বেলায় এটি জীবনভর অর্থাৎ সারা
জীবন চলতে থাকবে। তবে সাময়িক কিডনি বিকলের বেলায় বিষয়টি ভিন্ন, সাধারণত
কয়েকটি ডায়ালাইসিস করার পর তাদের কিডনি রোগ ঠিক ভালো হয়ে যায়।
ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয়
ডায়ালাইসিস মূলত কিডনির কার্যক্রম ও পরিচালনা গ্রহণ করে থাকে এবং কিডনি বিকল
রোগে আক্রান্ত অসংখ্য মানুষ ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া দ্বারা উপকৃত হয়। তবে এটি
আপনার কিডনি বিকল রোগ নিরাময় করে না। তীব্র কিডনি ব্যর্থতায় আক্রান্ত
রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস স্বল্প সময়ের জন্য একটি চিকিৎসা হতে পারে, যতক্ষণ না
রোগীর কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করা শুরু করে।তবে সাময়িক কিডনি বিকলের বেলায় বিষয়টি ভিন্ন, সাধারণত কয়েকটি
ডায়ালাইসিস করার পর তাদের কিডনি রোগ ঠিক ভালো হয়ে যায়।
তবে যাদের কিডনি একেবারে বিকল বা অকেজো হয়ে গেছে তাদের বেঁচে থাকার জন্য কোন
সুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়,একে কিডনি সংযোজন বলে।
কিডনি সংযোজন দুই ভাবে করা যায়ঃ কোন নিকট আত্মীয়ের কিডনি অথবা কোন মৃত
ব্যক্তির কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কিডনি
অকেজো রোগী কিডনি সংযোজন এর মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করছে।
কিডনি রোগের কোন পর্যায়ে ডায়ালাইসিস করতে হয়
কিডনি ডায়ালাইসিস কখন করতে হবে?কখন ডায়লিসিস করার প্রয়োজন পড়ে ? যখন
রোগীর কিডনি দূর্বল বা অকেজো হয়ে পড়ার পাশাপাশি রক্ত থেকে দূষিত ও বর্জ্য
পদার্থ পদার্থ এবং ফ্লুইড বেরতে ব্যার্থ হয় । তখন কিডনি রোগীকে সুস্থ রাখতে
প্রয়োজন হয়ে থাকে ডায়লিসিসের। এমন অবস্থায় তখনই ঘটে যখন রোগীর কিডনির
মাত্র ১০% থেকে ১৫% সক্রীয় থাকে ।
ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে
ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া সাধারণত অনেকটা ব্যয়বহুল। আমাদের দেশের
সরকারি হাসপাতালে এক হাজার টাকার আশেপাশে লাগতে পারে। তবে বেসরকারি
হাসপাতালে অনেকটা ব্যয়বহুল। বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার থেকে ৯
হাজার শুরু সহ অন্যান্য পরিবহন ও যন্ত্র সামগ্রী সহ অনেকটা ব্যয়বহুল খরচ হয়।
আমাদের দেশে সাধারণত ডায়ালাইসিস এর জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা অনেকাংশ কম। আপনি
বর্তমানে ডায়ালাইসিসের জন্য কত টাকা খরচ পড়তে পারে তার জন্য সরকারি এবং
বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ করতে পারেন।
ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা
কিডনি বিকল বা হেমোডায়ালাইসিস হলে তাহলে আপনার খাদ্যতালিকা এবং জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন করতে হবে।কিন্তু আপনি
দিনে যা খাবেন তা আপনার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অতএব, আপনার জন্য একটি
বিশেষ খাদ্য পরিকল্পনা করা উচিত আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। খাদ্য
তালিকায় যা থাকা উচিতঃ
- খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আপনার উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য রাখা উচিত
- তবে খাদ্য তালিকায় কম পরিমাণে থাকা সোডিয়াম ও পটাসিয়াম এবং উচ্চ মাত্রার ফসফরাস রয়েছে এমন খাবার বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
- খাদ্য এ পানি, চা, কফি, এবং অন্যান্য পানীয় সহ আপনি যে পরিমাণ তরল পান করতে পারেন সে সম্পর্কে আপনার চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
যে সব ফল খাওয়া যাবে :(প্রতিদিন যে কোনো এক প্রকারের ফল খেতে পারেন ৫০ – ১০০
গ্রাম ) পেয়ারা ১/২, আপেল ১/২, নাসপাতি ১/২, পাকা পেপে ২-৪ টুকরা, কমলা ১/২,
আনারস ২-৪ টুকরা, বেল |
এছাড়া আরো অনেক খাদ্য তালিকায় রয়েছে যা আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
খাদ্যতালিকা তৈরি করতে পারবেন।
শেষ কথা
কিডনি ভালো রাখতে অবশ্যই সতর্কতা বিষয় এ কিছু জানতে হবে। আমরা অনেকে আছি
যারা ডায়রিয়া বা বমি হওয়া ছাড়াই গরমে ঘেমে গেলে, ক্লান্ত অবস্থায় কিংবা তেমন
কোন কারণ ছাড়াই খাবার স্যালাইন পান করে থাকি। এটি একেবারে ঠিক নয়, বিশেষ করে
বয়স্ক মানুষের বেলায় ডায়রিয়া বা বমি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাবার
স্যালাইন খেলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। এমন আরো অনেক বিষয় আছে যা আমাদের জেনে
জীবন যাপন করতে হবে। আপনাদের যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর
পোস্টটিতে কোন কিছু ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।